শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার আসামির জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
তবে এই মেয়াদ কতোদিন বাড়ানো হয়েছে সেটা পরে জানানো হবে বলে আদালত জানিয়েছে। ঢাকার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) এ আদেশ দেন।
এই মামলায় শুনানির জন্য ১৬ই এপ্রিল পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
জামিন বাড়ল মুহাম্মদ ইউনূস সহ চার আসামির
শ্রম আইন লঙ্ঘনের এই মামলায় পহেলা জানুয়ারি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। সেই আদেশের বিরুদ্ধে তারা আপিল করেছেন।
সেই মামলায় তারা জামিনে ছিলেন, যার মেয়াদ ৩রা মার্চ শেষ হচ্ছে।
এ অবস্থায় রোববার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে সকাল ১০টার দিকে হাজির হয়ে ড. ইউনূস ও অন্য আসামিরা জামিন আবেদন করেন।
তার আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন আপিল নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন।
অন্যদিকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর পক্ষের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান সীমিত সময়ের জন্য জামিন দিতে শুনানি করেন।
পরে জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত জানান বিচারক। তবে কতদিনের জন্য বাড়ানো হয়েছে, তা জানাননি।
তিনি আদালতকে জানান, ড. ইউনূসের আরেকটি আবেদন আদালতে ৬ই মার্চ শুনানির জন্য রয়েছে। পরে আদালত ড. ইউনূসসহ চার আসামীর জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করে।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের নয়ই সেপ্টেম্বর মামলাটি করেছিল কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।
এ মামলার অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ না দেয়া এবং ১০১ জন শ্রমিকের চাকরি স্থায়ী না করা।
এছাড়া গণছুটি না দেয়া, শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিল এবং অংশগ্রহণ তহবিল গঠন না করাও অন্যতম অভিযোগ এই মামলার।
কলকারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা এ মামলায় অধ্যাপক ইউনূসসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অন্য অভিযুক্ত হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসান, পরিচালক নূরজাহান বেগম এবং মোঃ শাহজাহান।
গত বছরের জুন মাসে মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। এরপর পক্ষে বিপক্ষে শুনানির পর ২৪শে ডিসেম্বর রায়ের জন্য পহেলা জানুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করে আদালত।
অন্যদিকে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা অর্থপাচারের মামলায় অভিযোগ পত্র গ্রহণ করা হবে কিনা, সেই বিষয়ে আজ দুপুর ২টায় শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। এই মামলায় মোট ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
ড. ইউনূসের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা তখন জামিনের আবেদনও করবেন।
গত বছরের ৩০শে মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ছয় হাজার ৭৮০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ . মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। পরে সেখানে আরও একজনের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
পহেলা ফেব্রুয়ারি ওই মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছিল দুদক। আজ সেটির ওপর শুনানি হবে। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মোট ১৮ টি মামলা চলছে।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে এসব মামলা স্থগিত ও ‘বিচারিক হয়রানি’ বন্ধ চেয়ে আন্তর্জাতিক মহল আহবান জানিয়ে আসছিলো।
বিষয়টি নিয়ে নোবেলজয়ী বিশ্বের ১৬০ জন খ্যাতনামা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একাধিকবার চিঠি পাঠিয়েছে।
পরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অযথা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে কিনা তা দেখতে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের বাংলাদেশে আসার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বাংলাদেশে আসার কথা জানিয়ে ১২৫ জন নোবেলজয়ীসহ ২৪২ জন আন্তর্জাতিক ব্যক্তি খোলা চিঠিতে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন। যদিও ড. ইউনূসের আইনজীবীরা বলেছেন, তাদের আসার ব্যাপারটা সরকারের অনুমতির ওপর নির্ভর করে।
উৎসঃ বিবিসি