পাকিস্তান এবং ভারতের উপকূলের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়।
পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বলছে, বিপর্যয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিচ্ছে। স্থানীয় সময় ১৫ই জুন বিকেল নাগাদ পাকিস্তানের উপকূলীয় অঞ্চল এবং ভারতের গুজরাট উপকূলে আঘাত হানতে পারে এই ঘূর্ণিঝড়।
সিনধ সরকার উপকূলীয় কাটি বন্দর, ঠাঠা এবং বাদিন এলাকা থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। একইসাথে করাচির উপকূলীয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগ বলছে, ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার। এর ফলে সাগরে ঢেউয়ের উচ্চতা ৩৫ থেকে ৪০ ফুট পর্যন্ত বাড়ছে।
এরইমধ্যে ভারতের গুজরাটের দ্বারকা গুমতি ঘাট এলাকায় ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সাগরে বন্যা দেখা দিয়েছে এবং ঢেউয়ের উচ্চতা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে।
পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এনডিএমএ এর তথ্য অনুযায়ী, দেশটির উপকূলীয় এলাকা কাটি বন্দর থেকে ঘূর্ণিঝড়টি ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।
সংস্থাটির মতে, ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় করাচি থেকে সাড়ে তিনশ কিলোমিটার এবং ঠাঠা থেকে থেকে ৩৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।
ঘুর্ণিঝড়টি উত্তর দিকে অবস্থান করলেও ১৫ই জুন তারখে এটি উত্তর-পূর্ব দিকে সরে যাবে এবং কাটি বন্দর ও গুজরাট রাজ্য অতিক্রম করবে।
পাকিস্তানের জাতীয় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ-এনডিএমএ উপকূলের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে।
সবশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি ১৪ই জুন সকালে উত্তর দিকেই অবস্থান করবে এবং এর পরে এটি পূর্ব দিকে সরে গিয়ে সিনধ প্রদেশের উপকূলীয় এলাকা কাটি বন্দরে আঘাত হানতে পারে।
তার আগে এটি ভারতের গুজরাটের উপর দিয়ে বয়ে যাবে।
ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ে পাকিস্তানের ঠাঠা, বাদিন, সাজাওয়াল, থারপারকার, করাচি, মিরপুরখাস, উমারকোট, হায়দেরাবাদ, ওরমারা, টান্ডো আল্লাহইয়ার খান এবং টান্ডো মোহাম্মাদ খান আক্রান্ত হতে পারে।
ছবির উৎস,GETTY IMAGES
এনডিএমএ বলছে, ঘূর্ণিঝড়ে দমকা বাতাস, ভারী বৃষ্টি এবং সাময়িক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের সিনধ প্রদেশের সরকার কাটি বন্দর, ঠাঠা ও বাদিন উপকূলীয় এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। পাকিস্তানের ভবন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ করাচির ৫৭৮টি ভবনকে অনিরাপদ ঘোষণা করেছে।
করাচির কমিশনার এই ভবনগুলোর তালিকা সিনধ প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলি শাহের কাছে জমা দিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব ভবনকে দ্রুত খালি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট কমিশনারদের।
আর যেসব ভবন এরইমধ্যে খালি করা হয়েছে সেগুলো সিলগালা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। করাচির কমিশনার বলেন, সিনধের মুখ্যমন্ত্রীর আদেশে ভবনের দুর্বল খুঁটিগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
পাকিস্তানের জাতীয় এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষ পিআইএ, ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
সংস্থাটির মুখপাত্র জানান, আগামীকাল ভোর রাত তিনটা থেকে ঝড়ের প্রভাব বিমানবন্দর এবং বিমান চলাচল পথের উপর পড়তে শুরু করবে।
তিনি বলেন, করাচি এবং সুক্কুর ফ্লাইটের জন্য বিকল্প বিমানবন্দর হিসেবে লাহোর বা মুলতান বিমানবন্দর ব্যবহার করা হবে।
করাচি-সুক্কুর-করাচির মঙ্গলবারের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বুধবারের ফ্লাইটের বিষয়ে সেদিনের আবহাওয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।
পিআইএ’র মুখপাত্র বলেছেন, বিমানবন্দরের কন্টেইনার, ট্রলি, ডলি, প্রকৌশল সরঞ্জাম, র্যাম্প যানবাহন নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
পার্ক করে রাখা বিমানগুলো যাতে ঝড় ও বাতাসে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার জন্য সেগুলো মাটির সাথে আটকে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঝুঁকির পরিমাপের জন্য একটি ইমারজেন্সি রেসপন্স সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
ছবির উৎস, AFP
ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের কারণে বেলুচিস্তানের ওরমারা এলাকার গওয়াডার জেলায় সাগরের উচ্চতা বেড়ে নোনা পানি স্থানীয় বাড়ি ও দোকানে ঢুকে পড়েছে। তবে সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন যে, এটি এখনো মারাত্মক কিছু নয়।
পাসনি এলাকার সহকারী কমিশনার মুহাম্মাদ জান বেলুচ বিবিসিকে বলেছেন, “ওরমারার যেসব এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলো হচ্ছে আড গর, তাক এবং বিল।”
তিনি বলেন, ওরমারা শহরের পূর্বাঞ্চলে পানির উচ্চতা আবারো বেড়েছে। সোমবার থেকে এই এলাকার বাড়ি-ঘর ও দোকানপাটে পানি ঢোকা শুরু হয়েছে এবং এখনো তা অব্যাহত আছে।
বিপদের কথা মাথায় রেখে ওরমারার বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় শিবির স্থাপন করা হয়েছে। তবে বাসিন্দারা এখনো কেউ এসব শিবিরে আসা শুরু করেনি।
মি. বেলুচ বলেন, পাকিস্তান নৌবাহিনীর সহায়তায় ওরমারায় দেড়শো মাছ ধরার নৌকা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পিসনির কালামাত এলাকায় ঝুঁকির মুখে রয়েছে স্থানীয় ৭০০ বাসিন্দা।
ঝুঁকির মাত্রা আরো বেড়ে গেলে তাদেরকে বিমানে করে সরিয়ে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হয়েছে। গওয়াডার শহরে মাছ ধরার নৌকা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার শুরু হয়েছে।