ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ গাজায় বিমান থেকে ফেলা ত্রাণ ভর্তি বস্তার নিচে চাপা পড়ে অন্তত পাঁচজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী ও গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, একটি প্যারাসুটে বাধা ত্রাণ ভর্তি বস্তা সঠিকভাবে না পড়ায় এই দুর্ঘটনাটি ঘটে এবং এতে পাঁচজন মারা যায়।
গাজার এক চিকিৎসকের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপিও পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে। আলাদাভাবে বিবিসি এই তথ্য যাচাই করতে পারেনি। তবে কোন দেশের বিমান থেকে এসব ত্রাণ ফেলা হয়েছিলো তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।
গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে সাম্প্রতিক সময়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এমন অবস্থায় আমেরিকা, জর্ডান, মিশর, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস এবং বেলজিয়াম গাজায় বিমান থেকে বিভিন্ন ধরণের ত্রাণ ফেলছে।
জর্জানের রাষ্ট্রীয় টিভি একটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানাচ্ছে এই ঘটনার সাথে জর্ডানের কোন বিমানের সংশ্লিষ্টতা নেই।
সিবিএস নিউজ জানাচ্ছে, ঘটনাটি ঘটেছে স্থানীয় সময় সাড়ে এগারোটায়। ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড নিশ্চিত করেছে জর্ডানিয়ান এয়ারফোর্সের সাথে যৌথভাবে ফেলা বিমান সহায়তার সময় এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
মার্কিন জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার বলেছেন যে, বিমান থেকে তারা যে ত্রাণ ফেলেছেন সেগুলো নিরাপদে মাটিতে পৌঁছেছে। তাদের ফেলা সহায়তার মাধ্যমে কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি।
জাতিসংঘ বলছে, গাজার ২৩ লাখ জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে এবং শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে।
শুক্রবার সোশ্যাল মিডিয়ায় বিবিসি ভেরিফাইড একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি সি-১৭ কার্গো বিমান থেকে গাজা শহরের উত্তরে আল শাতির উপর দিয়ে বিমান সহায়তা ফেলা হচ্ছে। গত কয়েকমাসে কোন ধরণের সহায়তা না পাওয়া এলাকা ছিলও এটি।
সহায়তার বড় প্যাকেটগুলো যখন প্যারাসুটের মাধ্যমে নিচে ফেলা হয়, তখন এগুলো সঠিকভাবে খুলতে ব্যর্থ হলে এগুলো আরও অনিয়ন্ত্রিতভাবে নিচে পড়ে।
তবে ঐ সহায়তা ফেলার ভিডিও দেখে এটা বলা কঠিন যে কার এবং কি ভুল ছিলও। সেই সাথে ঐ ভিডিও দেখে এটাও নিশ্চিত নয় যে এটিই সেই দুর্ঘটনার সময়কার ভিডিও।
শুক্রবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে এই সপ্তাহান্তে সহায়তা পাঠানোর কাজ শুরু করতে পারে এমন চিন্তা থেকে তারা গাজায় একটি অস্থায়ী সমুদ্র বন্দর চালুর পরিকল্পনা করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা গাজায় সরাসরি সাহায্য পাঠানোর জন্য দ্রুত একটি অস্থায়ী বন্দর নির্মাণ করবে। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন এটি তৈরি করতে কমপক্ষে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে।
গাজায় সড়ক পথে ত্রাণ পাঠানোর সুযোগ বৃদ্ধি করতে পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলকে অব্যহতভাবে চাপ দিচ্ছে। এবং ত্রাণ পাঠানোর পথ সহজ করার জন্যও বলা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, “গাজায় দ্রুততম সাহায্য পাঠাতে ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিতে আমরা ইসরায়েলকে অনুরোধ জানাচ্ছি”।
ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছে। এবং একই সাথে অভিযোগ করছে গাজায় সাহায্য সংস্থাগুলি ত্রাণ বিতরণে ব্যর্থ হচ্ছে।
মিশর নিয়ন্ত্রিত রাফাহ ক্রসিং এবং ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত কেরাম শালোম ক্রসিং দিয়ে সাহায্যের বড় ট্রাকগুলো গাজার দক্ষিণে প্রবেশ করছে। তবে উত্তরের অংশ এই সহায়তা থেকে বিছিন্ন হয়ে গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে ত্রাণের সহযোগিতা নিতে নিয়ে ইসরায়েলি হামলায় একশো জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি মারা যায়।
গত সাতই অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী বিমান ও স্থল অভিযান শুরু করে। তখন থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ৩০ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি হয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে।