হোম বাংলাদেশ ঢাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : নিয়োগে গুরুত্ব পাচ্ছে কারা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : নিয়োগে গুরুত্ব পাচ্ছে কারা

Nepotism and party influence have become dominant in Jahangirnagar University faculty recruitment in many cases. The same is the case in the recruitment of officers.

0
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়|ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আত্মীয়তা ও দলীয় প্রভাব অনেক ক্ষেত্রেই মুখ্য হয়ে উঠেছে।কর্মকর্তা নিয়োগেও একই অবস্থা।

প্রভাষক পদে গত বছরের জুলাই মাসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। যিনি নিয়োগ পেয়েছেন, তিনি সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নূরুল আলমের দূরসম্পর্কের ভাগনি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় চলছে নিয়োগ

ওই সময় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতি ছিলেন মোহাম্মদ শওকত হোসেন। যেদিন তিনি সভাপতির দায়িত্ব ছাড়বেন, ঠিক তার আগের দিন গত বছরের ৫ জুলাই নিয়োগ বোর্ড বসিয়ে ওই শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়।

ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষকেরা বলছেন, সাবেক সভাপতি শওকত হোসেন উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ। প্রভাষক পদে ওই নিয়োগের ক্ষেত্রে আত্মীয়তার সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে যেসব নিয়োগ হয়েছে, সেসব বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আমার সময়ে এখন পর্যন্ত স্বজনপ্রীতি বা প্রভাবশালীদের কথায় কোনো নিয়োগ হয়নি।
নূরুল আলম, উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের বিষয়টি নিয়ে ১২-২০ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো ক্যাম্পাসে গিয়ে কথা বলেছে ২০ জন শিক্ষকের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি অনুষদের ডিন, পাঁচটি বিভাগের চেয়ারম্যান ও একজন সিনেট সদস্য রয়েছেন।

তাঁরা বলেছেন, কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে আত্মীয়তার সম্পর্ক, প্রশাসনিক পদে থাকা প্রভাবশালী কোনো শিক্ষকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং দলীয় প্রভাবের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে।

শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে ‘কে কার লোক’

—এই বিবেচনা অনেক ক্ষেত্রেই মুখ্য হয়ে উঠছে। বর্তমান উপাচার্যের সময়েও এই প্রবণতা অব্যাহত আছে।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বর্তমান উপাচার্য নূরুল আলমের গত দুই বছরের মেয়াদে বিভিন্ন বিভাগে অন্তত ৪৫ জন শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন। এর মধ্যে ১৬ জন শিক্ষকের নিয়োগ নিয়ে নানা প্রশ্ন ও বিতর্ক উঠেছে।

এর আগে ফারজানা ইসলাম যখন উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলেন তখনও শিক্ষক–কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। ওই সময় দেখা যায়, একই পরিবারের একাধিক সদস্য বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। এসব নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে আন্দোলন করেছিলেন শিক্ষকদের একটি অংশ।

নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি দীর্ঘদিন ধরেই চলছে, এটি অস্বীকার করার কিছু নেই। যোগ্যরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না পেলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সংকট তৈরি করে।
রায়হান রাইন, অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২২ সালের নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক পদে দুজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধ করতে উপাচার্যকে লিখিতভাবে আপত্তি জানান বিভাগের ১৭ জন শিক্ষক।

এমনকি প্রভাষক পদে দুই শিক্ষকের অস্থায়ী নিয়োগ হয়ে যাওয়ার পর তা বাতিলের দাবি জানিয়ে আবার উপাচার্যকে চিঠি লিখেন তাঁরা। কিন্তু ১৭ জন শিক্ষকের কোনো দাবিই আমলে নেননি উপাচার্য নূরুল আলম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন আছে কি না, সেটি ঠিক করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের একাডেমিক কমিটি। শিক্ষক নিয়োগের জন্য কোনো চাহিদাপত্র তখন বিভাগের একাডেমিক কমিটি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দেওয়া হয়নি।

এর পরও প্রভাষক পদে দুই শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়ার পেছনে কে কার আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ, সেটি বিবেচনা করা হয়েছে বলে জানান উপাচার্যকে চিঠি দেওয়া শিক্ষকেরা।

তাঁরা বলছেন, প্রভাষক পদে ওই নিয়োগে বয়সসীমা উল্লেখ ছিল না।

তবে প্রভাষক পদে যাঁরা নিয়োগ পান, তাঁদের বয়সসীমা সাধারণত ৩৩-৩৪ বছরের বেশি হয় না। তবে নিয়োগ পাওয়ার সময় দুই প্রভাষকের একজনের বয়স ছিল ৩৮, অন্যজনের ৪১।

দুজন প্রভাষক নিয়োগের আগে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক ছিলেন ২৪ জন। বিভাগের সাবেক সভাপতি মো. নুহু আলম গত শুক্রবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভাগে সহযোগী অধ্যাপকের পদ ফাঁকা ছিল। সহযোগী অধ্যাপক না নিয়ে দুজন প্রভাষক নিয়োগের চিন্তা করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের আপত্তির কারণে একাডেমিক কমিটিতে আর তোলা হয়নি। তৎকালীন উপাচার্যের (ফারজানা ইসলাম) পরামর্শে দুজন প্রভাষক নেওয়ার বিষয়ে নোট (মতামত) দিই।

সে অনুযায়ী তখন বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। তবে দুজন অস্থায়ী প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হয় বর্তমান উপাচার্যের সময়ে। এখানে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।’

প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া দুজনের একজন শামিমা আক্তার।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামানের স্ত্রী। প্রভাষক পদে নিয়োগ পাওয়া আরেকজন ফারহানা রহমান।

তাঁর স্বামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসানের ঘনিষ্ঠ বলে জানান শিক্ষকেরা।

উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বর্তমান সভাপতি ছালেহ আহাম্মদ খান প্রথম আলোকে বলেন, নতুন করে শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন ছিল না। বিষয়টি উপাচার্যের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েও কাজ হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে, মূলত শিক্ষক রাজনীতিতে নিজের নিয়ন্ত্রণ আরও মজবুত করতে প্রভাষক পদে ওই দুই শিক্ষকের নিয়োগের ব্যবস্থা করে দেন উপাচার্য নূরুল আলম।

উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক সভাপতি মো. নুহু আলম এখন জীববিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন। উপাচার্য তাঁকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন।

শিক্ষকেরা বলছেন, জীববিজ্ঞান অনুষদে কয়েক বছর ধরে ডিন নির্বাচন হচ্ছে না। উপাচার্য তাঁর পছন্দের কোনো শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত ডিন পদে দায়িত্ব দেন।

নিয়োগে ‘আত্মীয়তা’ ও রাজনৈতিক প্রভাব

জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে গত ছয় বছরে এই বিভাগের সাবেক চারজন শিক্ষার্থী নিয়োগ পেয়েছেন। এর মধ্যে তিনজনই কোনো না কোনো শিক্ষকের আত্মীয়। তাঁদের দুজনের বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের দুই অধ্যাপক।

নিয়োগ পাওয়া আরেকজনের স্বামীর বড় ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাঁর স্বামীও পরে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান।

এসব নিয়োগ দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ফারজানা ইসলামের সময়ে (২০১৪ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত)।

জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে তিন শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘আত্মীয়তার’ বিষয়টিকে যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে বলে মনে করেন একই বিভাগের অন্য দুজন শিক্ষক।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ওই তিনজন শিক্ষকের একজনের বাবা সাবেক উপাচার্য ফারজানা ইসলামের বিরোধীপক্ষে ছিলেন।

কিন্তু মেয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় তিনি ওই সময় উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। এরপর হঠাৎ করেই তিনি উপাচার্যপন্থী (ফারজানা ইসলাম) শিক্ষক হয়ে ওঠেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রভাবশালী শিক্ষকের সন্তান বা আত্মীয় হলে এবং রাজনৈতিক প্রভাব থাকলে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায় এমন আলোচনা রয়েছে ক্যাম্পাসে।

প্রথম আলো যে ২০ জন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছে, তাঁরা বলেছেন এটি গোপন কিছু নয়।

যদি এমন হয় নিয়োগপ্রার্থী দুজনের যোগ্যতা সমান, তাহলে যাঁর আত্মীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, তিনিই নিয়োগ পাবেন। এ নিয়ে লুকোছাপার কিছু নেই।

বিভিন্ন নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু আত্মীয়তা নয়, দলীয় প্রভাবও অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, এমন আলোচনা শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল পারভেজের স্ত্রী ২০০৯ সালে গণিত বিভাগে শিক্ষক পদে নিয়োগ পান।

সোহেলের সঙ্গে ওই কমিটিতে (২০০৬-২০০৯ সাল) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মাহমুদ নাসের। তাঁর স্ত্রীও ২০২১ সালে দর্শন বিভাগে শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। এই দুটি নিয়োগ নিয়ে তখন প্রশ্ন তুলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আ স ম ফিরোজ উল হাসান ২০০৯ সালে সরকার ও রাজনীতি বিভাগে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। ২০১১ সালে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে র‌্যাব তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল।

সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্তদের প্রশ্রয়ের অভিযোগে আলোচিত মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ গণিত বিভাগের শিক্ষক সাব্বির আলমও এক সময় ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন।

২০১৮ সালে পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগে নিয়োগ পান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আরেকজন সাবেক সভাপতি মাহমুদুর রহমান।

তাঁর স্ত্রীও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

মাহমুদুরকে ২০ ফেব্রুয়ারি নৈতিক স্খলনের অপরাধে বরখাস্ত করা হয়েছে।

স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়ে উপাচার্য নূরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে যেসব নিয়োগ হয়েছে, সেসব বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।

তবে আমার সময়ে এখন পর্যন্ত স্বজনপ্রীতি বা প্রভাবশালীদের কথায় কোনো নিয়োগ হয়নি’।

অন্য শিক্ষকদের আপত্তির পরও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক পদে দুজনকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, যোগ্য প্রার্থীরাই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক এবং প্রভাবশালীদের স্বজনদের নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে ২০১২ সালে। তখন উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। নিয়োগ পাওয়ার পর বিভিন্ন বিভাগে একের পর এক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া শুরু করেন। প্রথম তিন বছরেই তিনি প্রায় ২০০ শিক্ষক নিয়োগ দেন।

কর্মকর্তা নিয়োগে শিক্ষক ও প্রভাবশালীদের আধিপত্য

কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রেও আত্মীয়তা এবং রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করে এমন অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের মে মাসে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে যিনি নিয়োগ পেয়েছেন তাঁর স্বামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের বর্তমান সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদি জামিল।

এই নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল শিক্ষকদের একটি অংশ। তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে, নিয়োগের সময় ওই প্রশাসনিক কর্মকর্তার বয়স ছিল ৪৪ বছর। তাঁকে নিয়োগ দিতে কম বয়সী যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এখানে রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করেছে।

প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে ২০২২ সালে নিয়োগ পান বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রক্টরের ভাই এস এম ফাহমুদ উল হাসান। ২০২১ সালে উপাচার্য ফারজানা ইসলামের সময়ে ফাহমুদকে নিয়োগের জন্য বাছাই করা হয়। এরপর উপাচার্য হিসেবে নূরুল আলম দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই নিয়োগ হয়।

তবে উপাচার্য নূরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, স্বজনপ্রীতি বা অনিয়ম করে নয়, যোগ্যদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

উপাচার্যের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সভাপতি এ এস এম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা চলছে।

এই প্রবণতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ ও প্রশাসনিক কাঠামো নষ্ট করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে শৃঙ্খলা আনতে না পারলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

কর্মচারী নিয়োগে ‘বাণিজ্য’

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডিন নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে লেনদেনের কথা বিভিন্ন সময় তাঁরা শুনতে পান। বিশেষ করে হলে কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে এমন অভিযোগ বেশি শোনা যায়।

গত বছরের নভেম্বরে আল-বেরুনী হলে কর্মচারী নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী তাঁদের ‘পছন্দের’ প্রার্থী নিয়োগ দিতে চাপ প্রয়োগ করে হলের প্রাধ্যক্ষের ওপর।

এ ঘটনার জেরে গত ১৫ নভেম্বর প্রাধ্যক্ষের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী। পরে নিয়োগ স্থগিত করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, কর্মচারী নিয়োগ-বাণিজ্যে অনেকে জড়িত।

দীর্ঘমেয়াদি সংকট

শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম, নিজের লোককে বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে বসানো, কর্মচারী নিয়োগে বাণিজ্য—এসব ঘটনা নিয়ে নানা আলোচনা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবরই তা অস্বীকার করে।

৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে স্বামীকে আটকে রেখে তাঁর স্ত্রীকে পাশের ঝোপে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি দীর্ঘদিন ধরেই চলছে, এটি অস্বীকার করার কিছু নেই।

নিজেদের সুবিধার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনকে প্রশ্রয় দেয়। সব সরকারের আমলেই এমনটি ঘটে। এর ফলে একটি সুবিধাভোগী চক্র গড়ে ওঠে এবং শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হয়।

আর যোগ্যরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না পেলে তা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সংকট তৈরি করে।

উৎসঃ প্রথম আলো

মতামত নাই

একটা কিছু লিখে জান

আপনার মতামত টি লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

error: Content is protected !!

Discover more from গ্রাম বাংলা

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Exit mobile version