Monday, May 20, 2024
হোমবাংলাদেশপাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন যাচ্ছে কলেজের উচ্চশিক্ষা

The Ministry of Education is planning to take the government colleges under the National University under or under the supervision of different public universities of the country.

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন যাচ্ছে কলেজের উচ্চশিক্ষা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি কলেজগুলোকে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বা তদারকিতে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ঢাকার বড় সাতটি সরকারি কলেজ যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলছে, তেমনি অন্যান্য সরকারি কলেজও বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তদারকিতে চলবে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজের উচ্চশিক্ষা

শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর পড়ালেখার অবস্থা ভালো না, এটি সত্য। কিন্তু সরকারি কলেজগুলো অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তদারকির আওতায় নিলে পরিস্থিতি কেমন হবে, সেটি আগেই ভাবতে হবে।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত আছে। শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে এই প্রক্রিয়া ঠিক করা হবে।

“শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী”

কারণ, ঢাকার বড় সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার পর প্রথম দিকের অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না। অবশ্য এখন পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে।

তাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানে সামগ্রিকভাবে পরিকল্পনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আগেই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নিলে পরে নতুন করে সমস্যার আশঙ্কা আছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সঙ্গে বৈঠক হয় নতুন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর।

ওই বৈঠকে সরকারি কলেজগুলোকে অধিভুক্ত করে ‘একাডেমিক মনিটরিংয়ের’ দায়িত্ব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে দিতে প্রস্তাব করেন শিক্ষামন্ত্রী।

তিনি বলেন, এ জন্য আইন সংশোধনের প্রয়োজন হলে সরকার তা করবে। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা সরকারের এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে আগ্রহী বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

প্রথম আলো: ফাইল ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের কাছে এখনো করণীয় বিষয়ে বলা হয়নি।

তবে তিনি এই প্রস্তাবের পক্ষে। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করলে ভালো হবে।

সরকারি কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়া হলে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে।
“ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক নজরুল ইসলাম”

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত আছে। শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে এই প্রক্রিয়া ঠিক করা হবে।

বর্তমানে সারা দেশে অনুমোদিত পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১৬৯টি। স্বায়ত্তশাসিত চারটিসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৫৫টি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১১৪টি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মোট শিক্ষার্থী ৩১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি, যা দেশে উচ্চশিক্ষায় মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৭২ শতাংশ।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ আছে ২ হাজার ২৫৭টি। ৫৫৫টি সরকারি। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট কলেজের মধ্যে ৮৮১টিতে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়।

একসময় কলেজগুলো মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই চলত।

একপর্যায়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর চাপ কমাতে ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে কলেজগুলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনা হয়।

এখানে স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পড়াশোনা হয়। কিছু পেশাগত কোর্সেও ডিগ্রি দেয় বিশ্ববিদ্যালয়টি।

ইউজিসির ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল ক্যাম্পাসে স্নাতক প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯২-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, মূল ক্যাম্পাসে স্নাতকে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত আইনসংগত ও যথার্থ।

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মনে করেন, সরকারি কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়া হলে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে সরকার একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। তাঁদের আপত্তি থাকার প্রশ্নই আসে না; বরং কাজটি সমন্বিতভাবে করার জন্য যা যা করা দরকার, তাঁরা তা-ই করবেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময়ে দেশে কলেজের সংখ্যা কম ছিল।

তারপরও প্রতিষ্ঠানটি কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি বলে ইউজিসির বিভিন্ন সময়ের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর পড়াশোনার মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন আছে।

ঠিকমতো ক্লাস না করে পরীক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ার অভিযোগ আছে। বাস্তবতা ও চাহিদার মধ্যে সমন্বয় না করেই দীর্ঘদিন ধরে ঢালাওভাবে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কলেজে স্নাতক (সম্মান) চালু করা হয়েছে।

কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ কলেজেই উচ্চশিক্ষায় পড়ানোর মতো পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। শিক্ষার্থী ও কলেজের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সব কলেজকে ঠিকমতো দেখভাল করা সম্ভব হচ্ছে না বলে আলোচনা আছে।

ফলে এসব কলেজ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন না।

ইউজিসির ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল ক্যাম্পাসে স্নাতক প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯২-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, মূল ক্যাম্পাসে স্নাতকে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত আইনসংগত ও যথার্থ।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ২০২১ সালের জরিপের তথ্য বলছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ৬৬ শতাংশই বেকার থাকছেন।

এই অবস্থার মধ্যেও ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গাজীপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু করা হয়েছে।

যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিল ইউজিসি।

ইউজিসির ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল ক্যাম্পাসে স্নাতক প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯২-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, মূল ক্যাম্পাসে স্নাতকে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত আইনসংগত ও যথার্থ।

এ নিয়ে টানাটানির মধ্যে ২০২৩-২৪ নতুন শিক্ষাবর্ষেও মূল ক্যাম্পাসে স্নাতকে (সম্মান) শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এ অবস্থায় ১১ ফেব্রুয়ারি এই কার্যক্রমও বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে ইউজিসি।

ইউজিসি বলছে, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির নির্দেশনার আগপর্যন্ত ভর্তিসহ এ-সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

ইউজিসির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আলমগীর প্রথম আলোকে বলেছেন, এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আচার্য ও রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনার বিষয়টি একেবারে নতুনভাবে দেখা দরকার। কারণ, কলেজগুলোর পড়াশোনার অবস্থা খারাপ। ব্যবস্থাপনা, অর্থায়ন, প্রশাসন, পরিকল্পনা—সবগুলোতেই সমস্যা আছে। এ জন্যই এই দুর্বলতা। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও সমস্যা আছে। তাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানে সামগ্রিকভাবে পরিকল্পনা নেওয়া দরকার।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ”

শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যে চিন্তা থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, নানা কারণে তা পূরণ হয়নি।

এ অবস্থায় এক দশক আগে ২০১৪ সাল থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি কলেজগুলোতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অবস্থিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার আলোচনা শুরু হয়।

তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে ঢাকার সাতটি বড় সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কিন্তু প্রথম দিকে এসব কলেজের পরীক্ষা ও ফলাফল নিয়ে ব্যাপক সংকট তৈরি হয়েছিল।

এখনো সব সংকট না কাটলেও ধীরে ধীরে ক্লাস-পরীক্ষা পরিস্থিতির উন্নত হয়েছে।

শিক্ষাবিদ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনার বিষয়টি একেবারে নতুনভাবে দেখা দরকার।

কারণ, কলেজগুলোর পড়াশোনার অবস্থা খারাপ। ব্যবস্থাপনা, অর্থায়ন, প্রশাসন, পরিকল্পনা—সবগুলোতেই সমস্যা আছে। এ জন্যই এই দুর্বলতা।

তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও সমস্যা আছে। তাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানে সামগ্রিকভাবে পরিকল্পনা নেওয়া দরকার।

সৌজন্যেপ্রথম আলো
প্রকাশনায়প্রথম আলো
রাসেল আকন্দ
রাসেল আকন্দhttps://grambangla.net
যদিও আমরা অনেক পিছিয়ে আছি পশ্চিমা সভ্যতার থেকে। তবে থেমে থাকছি না।
সম্পর্কিত আরো কিছু খবর

একটা কিছু লিখে জান

আপনার মতামত টি লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

- Advertisment -

সর্বশেষ সংবাদ

আপনার জন্য

error: Content is protected !!

Discover more from গ্রাম বাংলা

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading