Monday, May 20, 2024
হোমবাংলাদেশময়মনসিংহ সিটি প্রকল্প টি তে অগ্রগতি অল্প

Two years after the creation of Mymensingh City Corporation, the organization received a special project of 1.5 billion rupees to increase citizen services.

ময়মনসিংহ সিটি প্রকল্প টি তে অগ্রগতি অল্প

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন হওয়ার দুই বছরের মাথায় নাগরিক সেবা বাড়াতে দেড় হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রকল্প পায় সংস্থাটি।

বাসিন্দাদের আশা ছিল, এই প্রকল্প তাদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ কমাবে। প্রকল্পের মেয়াদ ১০ মাস বাকি, আর কাজ হয়েছে মাত্র ২৩ শতাংশ। ফলে ভোগান্তি থেকে পুরোপুরি মুক্তি পায়নি নগরবাসী।

ময়মনসিংহ সিটি প্রকল্প

গত শুক্রবার থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন এলাকার সমস্যা ও প্রত্যাশা নিয়ে অন্তত ২০ জন ভোটার, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয়।

তাঁদের মতে, সিটি করপোরেশন হওয়ার পর সড়ক অবকাঠামো, সড়কবাতি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিক থেকে দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে। তবে বর্ধিত এলাকার সড়ক, ফুটপাত দখল, জলাবদ্ধতা, খেলার মাঠের সংকট ও মশার উপদ্রব রয়ে গেছে।

বিশেষ করে সিটি করপোরেশন এলাকার যানজট পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

আগামী ৯ মার্চ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। মেয়র পদে লড়ছেন পাঁচজন প্রার্থী। মেয়র প্রার্থীরা প্রচারে নগরের বিভিন্ন সংকট তুলে ধরছেন ও সেসব ভোগান্তি থেকে নগরবাসীকে উদ্ধার করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

অন্যদিকে এবারও মেয়র প্রার্থী হওয়া সদ্য সাবেক মেয়র ইকরামুল হক (টিটু) বিগত সময়ে উন্নয়নকাজের পরিসংখ্যান ও চিত্র তুলে ধরে সেগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষার কথা বলছেন।

সিটি করপোরেশনের সামগ্রিক কার্যক্রম নিয়ে গত রোববার দুপুরে কথা হয় সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলীর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশন হওয়ার পর দুই বছর চলে গেছে করোনা মহামারিতে।

অর্থনৈতিকভাবে চাপে থাকায় সরকার অনেক ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্র সাধন করেছে। এরপরও ময়মনসিংহে অনেক সড়ক সংস্কার, সড়কবাতি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, খাল খননের কাজ হয়েছে।

কাজ হয়েছে ২৩ শতাংশ

ময়মনসিংহ পৌরসভা বিলুপ্ত করে ২০১৮ সালের অক্টোবরে সিটি করপোরেশন ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। আগে ২১টি ওয়ার্ড নিয়ে ছিল ময়মনসিংহ পৌরসভা।

আরও ১২টি ওয়ার্ড গঠন করে মোট ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন। বিলুপ্ত পৌরসভার আয়তন ছিল ২১ দশমিক ৭৩ বর্গকিলোমিটার। সিটি করপোরেশনের আয়তন বেড়ে দাঁড়ায় ৯০ দশমিক ১৭ বর্গকিলোমিটারে।

সিটি করপোরেশন এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়ন ও নাগরিক সেবার চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ ও চরাঞ্চল থেকে আসা নতুন ওয়ার্ডগুলোতে অবকাঠামো একেবারেই দুর্বল ছিল।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন এলাকায় উন্নয়ন চাহিদা বিবেচনায় সরকার ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর বিশেষ প্রকল্প অনুমোদন দেয়। ‘ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন সড়ক উন্নয়ন ও ড্রেনেজ নেটওয়ার্কসহ নাগরিক সেবা উন্নতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ ১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৪৭৫ কিলোমিটার সড়ক, ৩৪৫ কিলোমিটার নালা (ড্রেন) ও প্রায় ১৭ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ করার কথা।

প্রকল্পের আওতায় আরও রয়েছে ৩৭ দশমিক ৫৯ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল ও ১ দশমিক ১০ কিলোমিটার সড়ক বিভাজক, ৩টি সেতু, ১৩টি কালভার্ট ও ৬টি পদচারী–সেতু নির্মাণের কাজ। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

গত রোববার সকালে সরেজমিনে শহরের নতুন বাজার এলাকায় নালা নির্মাণের কাজ করতে দেখা যায়। তবে কাজের গতি ধীর।

তিন মাস ধরে বন্ধ ছিল নতুন বাজার এলাকার হরি কিশোর রায় সড়ক। এখন সাহেব আলী সড়কে কাজ চলছে। এ কাজের জন্য অন্তত ২৫ দিন ধরে পুরো সড়ক বন্ধ। এ কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।

নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ করা সম্ভব হবে না উল্লেখ করে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পের কাজ শুরু হতেই অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।

এখন পর্যন্ত ৩৬৫ কোটি টাকার (২৩ শতাংশ) কাজ হয়েছে। ৮০০ কোটি টাকার কাজের দরপত্র হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে চলতি বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ অনেকটা এগিয়ে যাবে।

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরও জানান, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সিটি করপোরেশনের অগ্রগতি আছে। মূল শহরের বেশির ভাগ সড়ক এখন চলাচলের উপযোগী।

নতুন ওয়ার্ডে পুরোনো সমস্যা

ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশনের অংশ হওয়া ওয়ার্ডগুলোর বেশির ভাগ জায়গা এখনো যথেষ্ট নাগরিক সুবিধার আওতায় আসেনি। সাধারণ মানুষের আশা ছিল, সিটি করপোরেশন হলে তাঁদের এলাকার উন্নয়ন হবে।

তবে গত পাঁচ বছরে এলাকার চিত্র সেভাবে পাল্টায়নি। নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোর অনেক সড়কই বেহাল, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি, মশকনিধন কার্যক্রম নেই বললেই চলে।

নতুন যুক্ত হওয়া ৩১ নম্বর ওয়ার্ডটি ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে। খেয়াঘাট দিয়ে নৌকায় ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে যাতায়াত করতে হয় ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের। ব্রহ্মপুত্র পার হয়ে আগের মতো বালুর স্তূপ হেঁটে পার হয়ে সড়কে উঠতে হয়। সড়কটির অবস্থাও বেহাল।

ময়মনসিংহ সিটি প্রকল্প
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের চর কালিবাড়ী এলাকার বেহাল সড়ক| ছবি: প্রথম আলো

৩১ নম্বর ওয়ার্ডের চর গোবিন্দপুর গ্রামের তেরো বাড়ি এলাকার বাসিন্দা সামশুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঘাট থেকে চর গোবিন্দপুর যাওয়ার মূল রাস্তা একেবারে চলাচল অনুপযোগী ছিল।

সিটি করপোরেশন রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু ছয় মাসের বেশি সময় ধরে অর্ধসমাপ্ত করে ফেলে রেখেছে।

নাগরিক সুবিধায় পিছিয়ে

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডেই রয়েছে মশার উপদ্রব। সিটি করপোরেশনের কোনো স্যানিটারি ল্যান্ডফিল নেই।

চর কালীবাড়ি এলাকায় অবস্থিত ময়লা ফেলার ভাগাড়ে নিয়ে ফেলা হয়। বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য পরিবহনের জন্য পরিবারপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দিতে হচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে।

শহরের বাসিন্দাদের দিনের একটা বড় সময় কাটে যানজটে। অপ্রশস্ত সড়ক, সড়কের ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত ইজিবাইক (ব্যাটারিচালিত রিকশা) ও অপরিকল্পিতভাবে বহুতল ভবন নির্মাণে যানজট বেড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের গত বছরের গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের নবম ধীরগতির শহর ময়মনসিংহ।

জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ হলেও বলাশপুর, ভাটিকাশর, আকুয়া, নৌমহল, চরপাড়া, আউটার স্টেডিয়াম এলাকায় এখনো ভোগান্তিতে পড়তে হয় বাসিন্দাদের।

সিটি করপোরেশনের খেলার মাঠ ও পার্কের সংকট রয়েছে। ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে বেশ বড় জায়গা নিয়ে শেখ রাসেল শিশুপার্ক করার প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে জনবলের সংকটকে অন্যতম কারণ বলে দাবি করছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। কারণ, পাঁচ বছরেও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের জনবলকাঠামো অনুমোদন পায়নি।

ফলে পৌরসভার জনবল ও মাস্টাররোলে (দৈনিক মজুরি) কর্মী নিয়োগ করে পরিচালিত হচ্ছে কার্যক্রম। বর্তমানে সিটি করপোরেশনে রাজস্ব খাতে ২১৩ ও মাস্টাররোলে ১ হাজার ২৯৭ জন কর্মী আছেন।

এই কর্মীদের বড় অংশই পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ঝাড়ুদার। ময়মনসিংহের নাগরিক সংগঠন ‘জন উদ্যোগ’–এর আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ময়মনসিংহে যানজটসহ যেসব সংকট রয়েছে, সেগুলো নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেই।

আর উন্নয়নকাজের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রকল্পের টাকা শুধু খরচের জন্যই যেন কাজ না হয়, কাজের গুণগত মানও যেন ঠিক থাকে।

উৎসঃ প্রথম আলো

সৌজন্যেপ্রথম আলো
প্রকাশনায়প্রথম আলো
রাসেল আকন্দ
রাসেল আকন্দhttps://grambangla.net
যদিও আমরা অনেক পিছিয়ে আছি পশ্চিমা সভ্যতার থেকে। তবে থেমে থাকছি না।
সম্পর্কিত আরো কিছু খবর

একটা কিছু লিখে জান

আপনার মতামত টি লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

- Advertisment -

সর্বশেষ সংবাদ

আপনার জন্য

error: Content is protected !!

Discover more from গ্রাম বাংলা

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading