Friday, May 10, 2024
হোমবিশ্বইউরোপরাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ : ‘আমরা জানি কী হতে যাচ্ছে’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ : ‘আমরা জানি কী হতে যাচ্ছে’

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধের গতিপথে কেবল পরিবর্তনই আসেনি বরং খুব দ্রুত গতিতে এটি ঘটছে।

“আমরা জানি কী আসছে,” কস্টিয়ানটিনিভকায় নিজের ফ্ল্যাটের জিনিসপত্র প্যাকিং করার সময় একটি টেলিভিশনকে বলছিলেন মারিয়া। কিয়েভে ছেলের কাছে রওনা দেয়ার আগে এগুলো পাঠিয়ে দিবেন তিনি।

“আমরা ক্লান্ত এবং মুড ও প্যানিক অ্যাটাকে ভুগছি। একটানা বিষণ্নতা এবং আমরা ভীত।”

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ : ‘আমরা জানি কী হতে যাচ্ছে’

গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর আভডিভকা দখলের পর থেকে আরও পশ্চিমে অগ্রসর হচ্ছে এবং আর কিছু গ্রাম দখল করে নিয়েছে।

ইউক্রেন বলছে তাদের সেনারা অবস্থান ধরে রেখেছে কিন্তু রাশিয়ার সেনারা এখন রণাঙ্গনের প্রায় এগারশ কিলোমিটার জুড়ে পাঁচটি এলাকায় আক্রমণ করছে।

এখন তারা দোনেৎস্ক অঞ্চলের পূর্বাঞ্চলে, যেখানে ইউক্রেনের যোদ্ধাদের ব্যাপক পরীক্ষার মুখে পড়তে হচ্ছে।

তেতিয়ানা বাড়ি ছাড়তে রাজি নন।
ছবির উৎস,BBC/XAVIER VAN PEVENAEGE ছবির ক্যাপশান, তেতিয়ানা বাড়ি ছাড়তে রাজি নন।

পোকরোভস্ক, কস্টিয়ানটিনিভকা এবং ক্রামাতরস্ক শহরগুলোর মানুষ এখন দ্রুত অগ্রবর্তী রুশ ফ্রন্টলাইনের মুখে, দখলদারিত্বের মুখোমুখি।

মারিয়া ও তার মা তেতিয়ানা বুঝতে পারছেন যে রাশিয়ানরা যতই এগিয়ে আসছে, জীবন ততই কঠিন হয়ে আসছে। তাদের শহরের থেকে আক্রমণের শঙ্কায় আচ্ছন্ন। মাত্র ত্রিশ কিলোমিটার দূরেই রুশ বাহিনীর সম্মুখভাগের অবস্থান। প্রায় সব সড়কেই ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের দেখা মিলছে।

সেখানেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংস হওয়া একটি ট্রেন স্টেশনের কাছে একটি গির্জায় গোল্ড প্যানেল সংযোজন করছিলেন শ্রমিকরা।

এই শহরের ঠান্ডা বাতাস এখন উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় পরিপূর্ণ। শহরটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সময়কার একটি শিল্প এলাকা।

রাশিয়া এগুলো দখলের জন্য ধীরে ধীরে ইউক্রেনের একের পর এক শহর ধ্বংস করছে। সে কারণেই ভয় ছড়িয়ে পড়েছে এখানে।

মারিয়া জানাচ্ছিলেন, তার মা এখানে থাকবেন। যদিও তিনি আত্মবিশ্বাসী যে তার মাও তাকেই অনুসরণ করবেন।

“এখানে সবজায়গাই এখন ভয় পাওয়ার মতো। পুরো দেশ আগুনের মুখে”।

কস্টিয়ানটিনিভকা রেল স্টেশন
ছবির উৎস,BBC/HANNA CHORNOUS ছবির ক্যাপশান, কস্টিয়ানটিনিভকা রেল স্টেশন

তার চোখ ভিজে যাচ্ছিলো। একটি বিষয় হলো যতটা সম্ভব নিজের বাড়িতে থাকা। কিন্তু আরেকটি বিষয়ক হলো- মৃত্যু বা রাশিয়ার আগ্রাসনের ঝুঁকি।

পুরো ইউক্রেন এখন যুদ্ধরত এলাকা; দোনেৎস্ক অঞ্চলসহ আরও চারটি এলাকা এখন রণাঙ্গন।

এখানকার ঘন ও প্রসারিত বনজঙ্গল এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হবে আপনি সংঘাতের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছেন।

আপনি চল্লিশ কিলোমিটার দূর থেকেও ভারী গোলার শব্দ শুনবেন। কোনো একটি এলাকা থেকে আপনি দেখতে পাবেন ইউক্রেনের ভূখণ্ড ভেঙ্গে যাওয়ার দৃশ্য।

আভডিভকার দিক থেকে আসতে দেখা যাবে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। শহরটি সম্প্রতি দখল করেছে রাশিয়া। আর ২০১৪ সাল থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হরলিভকা।

নিজের আকার, এয়ার সুপিরিওরিটি ও অস্ত্র বারুদ ব্যবহার করছে রাশিয়া। এর কাছেই চমৎকার উপত্যকা। এখানকার প্রাকৃতিক ভুদৃশ্যশোভিত এলাকাটিতেই ইউক্রেনের সৈন্যরা ‘ফ্রন্ট লাইন’ বানিয়েছে।

ইউক্রেনের জেনারেলদের আশা কিছু এলাকা সাময়িকভাবে তারা হারালেও দীর্ঘমেয়াদে এসব এলাকা মুক্ত করতে পারবেন তারা।

পুরো ফ্রন্ট লাইন এলাকা জুড়ে কিছু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস আছে। যাদের রাশিয়াপন্থী মনে করে ইউক্রেনের মানুষ।

যদিও সবার জন্য তা প্রযোজ্য নয়। কিছু মানুষ শুধু তাদের বাড়িঘর পরিত্যক্ত করে চলে যেতে রাজি নয় এবং প্রতিদিনকার বিপদসংকুল পরিস্থিতির সঙ্গে তারা অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন।

তবে ভ্যালেরি তেমন নন। নিজের বাড়িতে দুই দফা গোলা বর্ষণ হওয়ার পর তিনি জিনিসপত্র নিয়ে নাতির হাত ধরে গিয়েছেন পিকআপ পয়েন্টে।

অথচ রাশিয়ানরা যখন পাঁচ কিলোমিটার দূরে তখনও তার প্রতিবেশীরা ঘর ছাড়তে রাজি হননি। পরে তিনি নাতিসহ পুলিশের একটি সশস্ত্র বাহনে উঠে বসেন।

“আমার জীবন আমি কাটিয়েছি। কিন্তু আমাকে এই বাচ্চাটিকে রক্ষা করতে হবে। বিশ বছর খনিতে কাজ করেছি তাই কিছুতেই আমি ভয় পাই না। কিন্তু তার (নাতি) জন্য আমি উদ্বিগ্ন।”

১৪ বছর বয়সী ডেনি বলছিলেন যে তার শেষ বন্ধুটিও চলে গেছে তিন সপ্তাহ আগে।

রণাঙ্গনের ফ্রন্ট লাইন থেকে শিশুসহ পরিবারগুলোকে সরিয়ে নেয়া অত্যাবশ্যকীয়। যদিও অন্তত পনেরটি শিশু এখন টরেৎস্ক শহরে।

প্রিয়জনের কাছ থেকে বিদায় নেয়া
ছবির উৎস,BBC/XAVIER VAN PEVENAEGE ছবির ক্যাপশান, প্রিয়জনের কাছ থেকে বিদায় নেয়া

পুলিশের উদ্ধারকারী দলের সদস্য অ্যান্টন প্রন ফ্রন্ট লাইন এলাকা থেকে লোকজনকে সরে যেতে সহায়তা করছিলেন। তিনি জানান যে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে।

“তারা প্রতিনিয়ত গোলাবর্ষণ করছে। রাশিয়ানরা এমনকি আবাসিক এলাকার বাড়িঘরে বোমা বর্ষণ করছে।”

এখন কাছের ক্রামাটরস্ক শহরের ট্রেন স্টেশনটি সৈন্যদের আসার আর বেসামরিক নাগরিকদের তল্পিতল্পাসহ চলে যাওয়ার জন্য শেষ স্টপেজ।

মূলত গোলাবারুদের শব্দই এখানে কাউকে স্বাগত জানায় কিংবা কারও বিদায় নেয়ার কারণ হয়।

ট্রেনের প্লাটফর্মে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নেয়ার দৃশ্য দেখা যায়। ট্রেনগুলোকে বিশেষ সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে যাতে অন্তত ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রক্ষা করা যায়।

২০২২ সালে এখানে অন্তত ৬১ জন নিহত হয়েছে। এখানেই কিয়েভের ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন আললা। “এক বছর আগে ভেবেছিলাম পশ্চিমারা আমাদের সহায়তা করবে কিন্তু এখন আর তা আশা করি না”।

“মানুষ আগে বিশ্বাস করতো কিন্তু এখন আর না”।

ইউক্রেন বিশ্বাস করে এর পূর্বাঞ্চলীয় ভূমি আবার বসবাসের জন্য নিরাপদ হবে। তবে এখন এটা পরিষ্কার নয় যে যারা চলে যাচ্ছেন তারা আবার কবে ফিরবেন। আসলে রাশিয়ানরা কোথায় গিয়ে থাকবে তার উত্তর দেয়াই এখন কষ্টকর।

রাসেল আকন্দ
রাসেল আকন্দhttps://grambangla.net
যদিও আমরা অনেক পিছিয়ে আছি পশ্চিমা সভ্যতার থেকে। তবে থেমে থাকছি না।
সম্পর্কিত আরো কিছু খবর

একটা কিছু লিখে জান

আপনার মতামত টি লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

- Advertisment -

সর্বশেষ সংবাদ

আপনার জন্য

error: Content is protected !!

Discover more from গ্রাম বাংলা

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading