হোম স্বাস্থ্য চিকিৎসা ধরাবাঁধা পথে চিকিৎসা সম্ভব না হলে বিকল্প মাথায় রাখতে হবে

ধরাবাঁধা পথে চিকিৎসা সম্ভব না হলে বিকল্প মাথায় রাখতে হবে

Stem cells work like medicine, if transplanted properly. Alternative methods should always be kept in mind if it is not possible to detect and treat the disease in the catchment way.

0
ফ্রান্সের প্যারিস ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের কার্ডিওভাস্কুলার সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ফিলিপ মিনাশে হৃদ্‌রোগের চিকিৎসায় স্টেম সেলের ব্যবহার নিয়ে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ঢাকা, ২৬ ফেব্রুয়ারি| ছবি: সংগৃহীত

স্টেম সেল ওষুধের মতো কাজ করে, যদি ঠিকভাবে তা প্রতিস্থাপন করা যায়। ধরাবাঁধা পথে রোগ শনাক্ত করা ও চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না হলে সব সময় বিকল্প পন্থার কথা মাথায় রাখতে হবে।

ধরাবাঁধা পথে চিকিৎসা সম্ভব না হলে বিকল্প

‘একবিংশ শতাব্দীতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতি, গবেষণা ও উদ্ভাবন’ শীর্ষক সম্মেলনে এই কথাগুলো বলেছেন বাংলাদেশ সফররত ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক দিনের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক সামাজিক সংগঠন তাফিদা রাকিব ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ৫০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এই সম্মেলনে যোগ দেন।

সম্মেলনের প্রথম উপস্থাপনায় ফ্রান্সের প্যারিস ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের কার্ডিওভাস্কুলার সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ফিলিপ মিনাশে হৃদ্‌রোগের চিকিৎসায় স্টেম সেলের ব্যবহার নিয়ে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

তিনি দুর্বল হৃৎপিণ্ডকে, অর্থাৎ কোষ মরে গেছে বা যাওয়ার উপক্রম হয়েছে—এমন হৃৎপিণ্ড সবল করে তুলতে স্টেম সেলের কার্যকারিতা নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষার পাশাপাশি রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, রোগ নিরাময়ে স্টেম সেল প্রতিস্থাপন নিয়ে সারা দুনিয়ায় নানা ধরনের পরীক্ষা–নিরীক্ষা চলছে। স্টেম সেল যথাযথভাবে প্রতিস্থাপন করা গেলে তা ওষুধের মতো কাজ করে।

উল্লেখ্য, স্টেম সেল হলো বিশেষ ধরনের কোষ, যা বিভাজিত হয়ে নতুন কোষ সৃষ্টি করতে সক্ষম। দুর্বল বা মৃত কোষের জায়গায় এই কোষ প্রতিস্থাপন করে চিকিৎসা দেওয়ার কার্যকারিতা নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা চলছে।

সম্মেলনে সাম্প্রতিক চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়েই মূলত আলোচনা হয়।

আলোচকেরা নিজেরা কী পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেন, সেই চিকিৎসার বিষয়ে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ কী প্রকাশিত হয়েছে, তা–ও উপস্থাপন করেন।

প্যারিসের আরেকজন চিকিৎসক অধ্যাপক কুমারন দিভা এনকেফালাইটিস বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, পশ্চিমা বিশ্বে এটি বিরল রোগ। এক লাখ মানুষে ১০ জনের মতো এই রোগে আক্রান্ত হয়। যারা তীব্র রোগে আক্রান্ত হয়, তাদের মধ্যে ছয়জনের মৃত্যু ঘটে।

এই রোগের লক্ষণ এবং লক্ষণ অনুযায়ী কী চিকিৎসা দিতে হবে, তার বিস্তারিত বর্ণনা দেন তিনি। এরপর তিনি বলেন, জানাবোঝা সবকিছু করার পরও দেখা যায় রোগী ভালো হচ্ছে না। এর কোনো ব্যাখ্যাও পাওয়া যাচ্ছে না। তখন অন্য কিছু ভাবতে হবে, বিকল্প মাথায় রাখতে হবে।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম আব্দুল মোমেন। দেশের চিকিৎসাসেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিবেশী দেশ ভারতে চিকিৎসা ব্যয় তুলনামূলক কম।

বছর দুই আগের পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, বছরে বাংলাদেশ থেকে ২৮ লাখ মানুষ ভারত ভ্রমণ করে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ যায় চিকিৎসার জন্য।

ভারতে চিকিৎসা ব্যয় গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ মার্কিন ডলার।

আর যাতায়াতে গড়ে খরচ ১০০ মার্কিন ডলার। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ডে বিত্তবানেরা চিকিৎসা নিতে যান। তাদের সঠিক পরিসংখ্যান জানা যায় না। তবে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে রোগী দেখে মনে হয় হাসপাতালটি বাংলাদেশিদের জন্য।

বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপনের মাঝে কথা বলার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীকে।

তিনি বলেন, ম্যালেরিয়া দরিদ্র মানুষের রোগ, তাই এই রোগ মোকাবিলায় অর্থ দিতে ধনী দেশগুলোর আগ্রহ কম। বিজ্ঞানের সুফল যেন সব মানুষ পায়, বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী—এই বিষয়ে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের বেশি মনোযোগী হতে হবে।

মৃগীরোগ নিয়ে দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বক্তব্য উপস্থাপন করেন। যুক্তরাজ্যের একটি শিশু হাসপাতালের স্নায়ুরোগবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রনিট প্রেসলার বলেন, মৃগীরোগ শনাক্ত করা কঠিন। ভুল হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

এ ছাড়া সাধারণ চিকিৎসক, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, স্নায়ুরোগবিশেষজ্ঞসহ নানা বিষয়ের চিকিৎসকেরা এই রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। সব ক্ষেত্রে এক চিকিৎসা হয় না, চিকিৎসার পরিভাষাতেও পার্থক্য দেখা যায়।

অন্য উপস্থাপনায় ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ব্রেন সায়েন্সেস বিভাগের মৃগীরোগবিশেষজ্ঞ ম্যাথিয়াস কোয়েপ বলেন, স্নায়ুরোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন রোগীদের মৃগীরোগের ঝুঁকি নির্ণয়ে অ্যাপ ব্যবহার করা যেতে পারে। যাদের ঝুঁকি বেশি, তাদের চিকিৎসার আওতায় নিতে হবে।

ইতালির জেনোয়ার গ্যাসলিনি শিশু হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সেরাফিনো ম্যাসিমিলিয়ানো বলেন, শিশুদের চোখ বিকাশমান। বয়স্কদের চোখের থেকে শিশুদের চোখে অনেক পার্থক্য।

শিশুদের চোখে অস্ত্রোপচার করতে হবে উপযুক্ত সময়ে, অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। মনে রাখতে হবে, অস্ত্রোপচারের পর শিশু যেন দেখতে যায়। অনেক বিষয় বিবেচনায় নেওয়ার পাশাপাশি এটাই ভাবতে হবে, শিশুটির চোখে আদৌ অস্ত্রোপচার দরকার আছে, নাকি দরকার নেই। কারণ, সে শিশু।

হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত কিছু মানুষের কেন যৌন সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকি আছে,

তার ব্যাখ্যা দেন যুক্তরাজ্যের ব্লাকপুল ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের কনসালট্যান্ট জিয়াউদ্দীন খান। তিনি বলেন, সমস্যা চেপে না রেখে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া ভালো।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সম্প্রতি কিছু হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। তবে হাসপাতাল বন্ধ করে এসব সমস্যার সমাধান হবে না।

শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মুবিন খান।

তিনি বলেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন নতুন গবেষণা, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের বিষয়ে দেশের মানুষ ও চিকিৎসকদের জানানোর উদ্দেশ্যে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এতে সবাই উপকৃত হবে।

উৎসঃ প্রথম আলো

প্রকাশনায়ঃ প্রথম আলো

মতামত নাই

একটা কিছু লিখে জান

আপনার মতামত টি লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

error: Content is protected !!

Discover more from গ্রাম বাংলা

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Exit mobile version